দেখতে ভারতীয় কিন্তু আসলে চীনা, অনুপ্রবেশের শিকড় অনেক গভীরে - Benami Diary

Thursday, July 2, 2020

দেখতে ভারতীয় কিন্তু আসলে চীনা, অনুপ্রবেশের শিকড় অনেক গভীরে


বাজারে এখন সবচেয়ে হট টপিক ভারত চীন দ্বৈরথ। চীনের ভারতে অনুপ্রবেশ ভারতীয় সৈন্যদের আক্রমন এবং তারপর ভারতের প্রতি আক্রমনের ঘটনা সবার জানা। এরফলে ভারতের তরফে চীনা অ্যাপ ব্যান করা নিয়ে এখনো চর্চা তুঙ্গে। নেহাত চাইনিজ করোনার ভয়ে চায়ের দোকানে এখনো ঠিক ঠাক করে আড্ডা চলছেনা তাই এনিয়ে সেভাবে জানা যাচ্ছেনা। নয়ত প্রতিটা পাড়ার মোড়ে বিশেষজ্ঞরা জানিয়ে দিতেন কি হবে এই ব্যানের ফলে। তবে সে ঠিক আছে, সরকার ব্যান করেছে চীনা অ্যাপ এবং আশা করি সকলে সেসব আনইনস্টল ও করে ফেলেছেন। কিন্তু জানেন কি আমাদের দেশের ডিজিট্যাল বাজারে আরও অনেক বড়ো অনুপ্রবেশ হয়ে বসে আছে।

হ্যাঁ একরকম অনুপ্রবেশই বটে। চীনা সংস্থার বা চীনের অ্যাপ ভারতে ব্যান হয়েছে। কিন্তু তারা কিভাবে ফিরে আসতে পারে তা আগের দিন এক আর্টিকেলে জানিয়েছিলাম। কিন্তু এটাকি জানেন ভারতীয় বলে যেসব অ্যাপ ব্যবহার করছেন সেগুলোর অধিকাংশতেই রয়েছে চীনা লগ্নি? এমনকি কদিন আগে প্রথম সারির সংবাদপত্রে গর্বের সাথে ভারতীয় বলে বিজ্ঞাপন দেওয়া এক অ্যাপের সিংহভাগ শেয়ারই চীনা। চলুন দেখে নেই এমন কয়েকটি অতি পরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত ৫টি অ্যাপ যা আমরা ভারতীয় বলে জানি সেগুলোতে বিশাল পরিমান চীনা লগ্নি রয়েছে।


১. ওলা ক্যাব- ভারতের মেট্রো শহরগুলিতে এই মুহূর্তে যদি দশজন মানুষ ক্যাব ব্যবহার করেন তাহলে দেখা যাবে তার মধ্যে এই মুহূর্তে সাতজনই অ্যাপক্যাব ব্যবহার করেন। এই অ্যাপ ক্যাবে যেমন ভালো পরিষেবা পাওয়া যায় তেমনি তুলনামূলক কম ভাড়াও গুনতে হয়। এমনকি এতে পুরোনো ট্যাক্সির মতো যাত্রী হয়রানি অনেক কম হয়। এই অ্যাপক্যাবের দুনিয়ায় ওলা একটি অত্যন্ত পরিচিত নাম। শুধু মেট্রো শহর নয়, মাঝারি ও ছোটো শহর গুলিতেও এখন ওলা পরিষেবা দিচ্ছে। তাই আম মধ্যবিত্ত ভারতীয়দের মধ্যে এই অ্যাপক্যাবের জনপ্রিয়তা প্রচুর। কারন যে খরচে ওলা পরিবহন করে তাতে গাড়ি ভাড়া অন্তত হয়না। কিন্তু এটা জানেন কি এই অ্যাপেও রয়েছে বিশাল চীনা বিনিয়োগ রয়েছে।ওলাতে মোট ৮০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের চীনা সংস্থা দিদি চাক্সিং টেকনোলজি সিংহভাগ বিনিয়োগ করেছে। এই সংস্থাও চিনে অ্যাপ ক্যাব এবং অন্যান্য গাড়ি ভাড়ার ব্যবসা করে। পাশাপাশি ভারতে ওলার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী উবারের চীনা ভার্সনের মূল বিনিয়োগকারী এই সংস্থাই।

২. গো আইবিবো এবং মেক মাই ট্রিপ- ভারতের মতো বিশাল দেশে পর্যটন চিরদিনই একটি বড় ব্যবসা। আজকের দিনে কোথাও ঘুরতে গিয়ে যাতে ঘর পাওয়ার সমস্যায় না পড়তে হয় সেই জন্য প্রায় প্রত্যেকেই অনলাইন বুকিং করেন।
বেশ কিছুদিন আগে গো আইবিবো এবং মেক মাইট্রিপের সংযুক্তির ফলে এই মুহূর্তে রেডবাস, মেক মাইট্রিপ, গো আইবিবো সবগুলি সংস্থা একই ছাদের তলায় এসে গেছে। এই নতুন কোম্পানিতে চীনা সংস্থা টেনসেন্ট এর প্রায় ৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। 

৩. হাইক-
 ইন্টারনেট দুনিয়ায় প্রায় অনেকেই হোয়াটস‌অ্যাপের বিকল্প ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্লাটফর্ম হিসেবে হাইক ব্যবহার করেন। এই অ্যাপে প্রচুর ভারতীয় স্টিকার আছে যা প্রায় সমস্ত ভাষাতেই পাওয়া যায়। এইজন্য অনেকে এই অ্যাপটিকে ভারতীয় অ্যাপ ভেবে নেন। কিন্তু বিষয়টি এত সহজ নয়। হাইকের পুরো শেয়ারটাই টেনসেন্ট হোল্ডিং এবং ফক্সকন টেকনোলজির হাতে। যার মধ্যে প্রথমটি চীনের এবং দ্বিতীয়টি তাইওয়ানের। এর মূল্য প্রায় ১.৪ বিলিয়ন ডলার।

৪. স্নাপডিল- ভারতে এই মুহূর্তে অনলাইন শপিং এর চেয়ে ভালো বিক্রিবাটা কোথাও হয়না। এই অনলাইন শপিং এর চক্করে প্রচুর দোকান বসে গিয়েছে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র। আর এই ব্যবসায় স্নাপডিল অন্যতম প্রথম সারির অ্যাপ। যদিও অ্যমাজন এবং ফ্লিপকার্টের সাথে সেবনে কম্পিটিশন করতে পারছে এই মুহূর্তে, তবুও অনলাইন শপিংয়ে উল্লেখযোগ্য বাজার ধরে রেখেছে এই সংস্থাটি। এই সংস্থার ইনভেস্টরদের মধ্যে অন্যতম জাপানের সংস্থা সফটব্যাংক গ্রূপ। যারা আবার চীনা বহুজাতিক সংস্থা আলিবাবা গ্রূপেরও ইনভেস্টর। ফলে এখানেও ঘুরপথে চীনা পুঁজি খাটছে।

৫.ফ্লিপকার্ট-
 নামটা শুনে খটকা লাগল? লাগাটাই স্বাভাবিক। এতদিন আমরা সবাই জেনে এসেছি ফ্লিপকার্ট ভারতের সংস্থা। তাহলে? নাহ আপনার আমার জানাটা ভুল নয়। শচীন বনসল দেবগন বিনি বনসলই এর প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু এর মধ্যেও খবর আছে। ২০১৭ সালে ফলিপকার্ট প্রায় ১১.৬ বিলিয়ন ডলার পুঁজি সংগ্রহ করে, যারমধ্যে উল্লেখযোগ্য পুঁজি ছিল চীনা সংস্থা টেনসেন্টের ও  এই অ্যাপেও ঘুরপথে সফটব্যাঙ্কের মাধম্যে আরও চীনা পুঁজি রয়েছে। যদিও এই মুহূর্তে ওয়ালমার্টের হাতে প্রায় ৭৭% শেয়ার রয়েছে ফ্লিপকার্টের, তবুও এর মধ্যে চীনা পুঁজির পরিমান মোটেই কম নয়।

তাহলে এই তালিকায় এমন কিছু অ্যাপ রয়েছে যেগুলো এতদিন সত্যিই ভারতীয় বলে জানতাম আমরা। অথচ বেশিরভাগ অ্যাপেই উল্লেখযোগ্য পরিমান চীনা পুঁজি রয়েছে। ফলে যদিও আপনি ভাবছেন চীনা জিনিস ব্যবহার করবেন না, এবং তার বদলে এইসব অ্যাপ ব্যবহার করবেন, সেক্ষেত্রেও কিন্তু লাভের গুড় সীমান্ত পেরিয়ে চিনেই যাবে। বলতে ভুলবেন না কোন নামটি আপনাকে সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য করেছে।

পুনশ্চ- আমরা অনেক সময় ওপর দিয়ে দেখে জিনিস নিয়ে ভুল করি। যেমন বয়কট চায়না টুপি আর টিশার্ট পরে ঘুরে বেড়াই,যেগুলো আবার চিনে তৈরি হয়। এটা বলার কারন হল কয়েকদিন আগে এই ভারত চীন ঝামেলার মধ্যে যখন ভারতীয় জনগনের মধ্যে চীনা পণ্য বয়কটের কথা উঠল তখন একটি বহুল প্রচারিত অ্যাপ কয়েকটি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানাল তাঁরা গর্বের সঙ্গে ভারতীয়। নিশ্চয়ই বুঝে গেছেন কাদের কথা বলছি। হ্যাঁ পেটিএম।
সৌজন্যে- আনন্দবাজার পত্রিকা 

 আর পেটিএমে চীনা সংস্থা আলিবাবা গ্রূপের নয় নয় করে ৬২৫ মিলিয়ন ডলার পুঁজি রয়েছে। এবং এই  অ্যাপের কনসেপ্টও চীনা। তাই গর্বের সাথে ভারতীয় বলে ওই অ্যাপ ব্যবহার করার সময় মনে রাখবেন হয়ত ওই বিজ্ঞাপনের কনসেপ্টটাও মেড ইন চায়না।

No comments:

Post a Comment