সরকার না হয় চীনা অ্যাপ ব্যান করল, তাইবলে কি ব্যবহার করব না নাকি? - Benami Diary

Tuesday, June 30, 2020

সরকার না হয় চীনা অ্যাপ ব্যান করল, তাইবলে কি ব্যবহার করব না নাকি?




দেশজুড়ে হইহই পড়ে গেছে। সরকার ৫৯ খান চীনা অ্যাপ ব্যান করে দিয়েছে। গোটা দেশজুড়ে একদম দেখুন কেমন বদলা নিলাম মার্কা ভাব সব্বার মধ্যে। বিশেষত যারা কদিন আগেই প্লে স্টোরে দৌড়ে দৌড়ে টিকটককে 1স্টার রেটিং তারা একটু বেশিই খুশি। কিন্তু কথাটা হল এর দ্বারা সত্যিই কি কতটা লাভ হল? রাতারাতি কি আমাদের ফোন থেকে উড়ে যাবে সমস্ত চীনা অ্যাপ? চলুন একটু তলিয়ে দেখি।

আমরা এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা মূলত যে কোনো অ্যাপ ইনস্টল করার জন্য প্রাথমিক ভাবে গুগল প্লে স্টোর ব্যবহার করি। আপাতত তালিকায় থাকা প্রায় সমস্ত অ্যাপই প্লেস্টোরে আর পাওয়া যাচ্ছেনা। কিন্তু এটাই কি ফাইনাল? অর্থাৎ আর কোনো ভারতীয় এন্ড্রয়েড ব্যবহারকারী এই সব অ্যাপ কোনোভাবেই কি ইনস্টল করতে পারবেন না? নাহ বিষয়টা আসলে এতটা সোজা নয়। কারন প্লে স্টোর ছাড়াও একাধিক অ্যাপ ডাউনলোড করার অনলাইন স্টোর রয়েছে। সেখানে কিন্তু এইসব অ্যাপ পাওয়া যেতেও পারে। তবে যদিও সেটার সম্ভাবনা কম কারন সেটা সরকারি সিদ্ধান্তের পরিপন্থী হবে।

এরপর আসছি দ্বিতীয় অপশনে। ভিপিএন, নামটা নিশ্চয়ই জানেন সকলে। ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে আপনি আপনার নিজের পরিচয় অর্থাৎ আইপি এড্রেস লুকিয়ে নেট ব্যবহার করতে পারেন। ফলে আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার আপনার গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে সাইটগুলো ব্লক করতে পারেনা। এরফলে আপনি ভারতে বসেই ফ্রান্স বা আমেরিকার আইপি এড্রেস দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন এবং সহজেই আপনি এদেশে নিষিদ্ধ ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারবেন। সবার মনে আছে কিছুদিন আগে সরকার দেশে পর্ন সাইটগুলো নিষিদ্ধ করেছিল। সত্যিই কি কেউ সেটা দেখতে পাচ্ছেন না? ঠিক একই ভাবে কিন্তু যে কেউ এই অ্যাপগুলি ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু সেখানেও একটা অসুবিধা রয়েছে। আপনার সমস্ত আক্যাউন্ট গুলো এই দেশের ঠিকানা এবং সার্ভারের সাথে সম্পৃক্ত। তাই আপনি কিন্তু এভাবেও অ্যাপগুলি ব্যবহার করতে পারবেন তার নিশ্চয়তা নেই। তাহলে তো কোনো চিন্তা না থাকারই কারন। কিন্তু এত সহজেই এগুলোর শেষ নয়।

তৃতীয় সম্ভাবনাটা অতীব সহজলভ্য। ইন্টারনেটে প্রচুর সাইটে সমস্ত অ্যাপের ক্র্যাক ভার্সন পাওয়া যায়। এইসব সাইটগুলো আপনাকে এপিকে ফাইলে গ্রাহকদের এপ্লিকেশন গুলি দেয়। তারপর ডাউনলোড করে এগুলি ইনস্টল করতে হয়। তাই এই এক সম্ভাবনা রয়ে গেল ব্যবহার করার। কিন্তু সেক্ষেত্রে যেসব অ্যাপ ইন্টারনেট সংযোগে চলে এবং সার্ভারে ডেটা লেনদেন হয় সেইসব অ্যাপ ব্যবহারে একটু অসুবিধা হতে পারে। তবে অন্যান্য অ্যাপ গুলি এভাবে ব্যবহার করা যেতেই পারে। তাই প্লেস্টোর থেকে সরে গেলেই যে এইসব অ্যাপ ব্যবহার বন্ধ হয়ে গেল তা মনে করার কোনো কারণ নেই।

শেষ একটা সম্ভাবনার কথা আমি বলব যেটা সবচেয়ে অসুবিধার কারন হতে পারে ভারতীয়দের জন্য। চীনা প্রচুর অ্যাপ চীন নয় একাধিক অন্যান্য দেশ থেকে থেকে আপলোড করা হয়, আর তাদের সদর দফতর অন্ততঃ কাগজে কলমে অন্য দেশে। যেমন ঠিক এমআই কোম্পানির ভারতীয় উইংএর  সিইও মনু কুমার জৈন বলেছিলেন অন্য অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে বেশি ভারতীয় তাঁরা। তাই চীনাদের পক্ষে সবই সম্ভব। এমনকি এই দেশে খুব জনপ্রিয় ইউসি ব্রাউজার একটি চীনা কোম্পানি কিন্তু প্লে স্টোরে রয়েছে সিঙ্গাপুরে কোম্পানি হিসেবে। তাই এটা করা খুব একটা জটিল নয় বিশেষত চীনাদের পক্ষে। আর একটা অ্যাপ প্লেস্টোরে আপলোড করার জন্য মাত্র ২৫ ডলারের এককালীন এক ফি লাগে। সেটা অতি নগন্য মূল্য। আর ভারতের যা বাজার তারজন্য চীনারা ২৫ কোটি ডলারও খরচ করতে রাজি হবে। তাই ব্যান কোনোদিন খুব সহজে হওয়ার নয়।

তাহলে উপায়? উপায়টা খুবই সহজ। আপনি আমি যদি নিজে থেকে ফোনে ইনস্টল না করেন তাহলে তো চীনারা এসে আপনার ফোনে ইনস্টল করে যাবেনা? আমি নিজে চীনা ফোন ব্যবহার করি, কিন্তু ক্যাম স্ক্যানার ছাড়া কোনো চীনা অ্যাপ রাখিনি। এখন তার বদলে ব্যবহার করছি এডোব স্ক্যান। হ্যাঁ অসুবিধা হচ্ছে কিন্তু তবুও চীনা অ্যাপ রাখবনা। তাই ইনস্টল আর আনইনস্টল দুটো অপশনই আপনার হাতে। নিজে সচেতন ভাবে বয়কট করলেই একমাত্র সরকারের সিদ্ধান্তটা সফল হবে।

2 comments: