ফাঁসির আসামী, বাঁচা মরার ঠিক মাঝামাঝি ঝুলে থাকা। কেমন কাটছে দিনগুলো, চলুন দেখে আসি। - Benami Diary

Friday, June 26, 2020

ফাঁসির আসামী, বাঁচা মরার ঠিক মাঝামাঝি ঝুলে থাকা। কেমন কাটছে দিনগুলো, চলুন দেখে আসি।




আফজল গুরু হোক বা আজমল কাসব। ফাঁসির সাজা শোনার পর আরেকটা উপায় থাকে সেটা হল মার্সি পিটিশন। দুজনেই করেছিলেন। রাষ্ট্রপতি সময় নিয়ে সেটা নাকচ করেন। সে না হয় হল। নাকচের পরও তাঁরা বাঁচেন। বেশ কিছুদিন বাঁচেন। তা প্রায় হপ্তা খানেক। জানেন যে ভুল করেছেন তার সাজা তাঁরা পাবেনই। কোনো ফাঁক নেই। কিন্তু ক্ষমা ভিক্ষা নাকচ হওয়া আর ফাঁসির দিন ধার্য হওয়ার মাঝে যে সময়টা থাকে সেইসময় তাঁরা প্রতিটা মুহূর্তে মারেন। প্রতিটা রাতে এই ভেবে ঘুমোতে যান এই বুঝি জেলার এসে বলল কাল তোমার ফাঁসি। মরতে হবে জেনেও এই আধমরা হয়ে থাকতে হয় বেশ কিছুদিন। আর এই যন্ত্রনাটা মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়েও বেশি কঠিন।


 গোটা বাংলা তথা দেশ লড়ছে করোনার বিরুদ্ধে, আর একটা প্রজন্ম একটা ছাদের তলায় শেষ হয়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র একটা স্তরের মানুষের একগুঁয়েমি, সবজান্তা ভাবের জন্য। হ্যাঁ করোনার বিরুদ্ধে লড়াইটা জরুরি, কিন্তু সেই লড়াই লড়তে গিয়ে একটা রাজ্যের সতের আঠের বছর বয়সী বাচ্চা গুলোর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা কেন? যখন গোটা বাংলায় মাত্র একটা করোনা রোগী ছিল তখন হঠাৎ করেই পরীক্ষা স্থগিতের নির্দেশ। তারপর পাল্লা দিয়ে করোনা রোগী বাড়ছে দেশে, উল্টো দিকে সুস্থও হচ্ছে। কিন্তু যেমন কোনো কারণ ছাড়াই পেট্রল ডিজেলের দাম হুহু করে বাড়ছে সেরম ভাবেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীগুলো সমানুপাতিক ভাবে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। দুটো সরকারের আরও মিল হল কেউই এই নিয়ে একটা শব্দ পর্যন্ত উচ্চারণ করছেননা। সিবিএসই, আইসিএসই ঘোষণা করতে পারে পরীক্ষা স্থগিদের কিন্তু আমাদের বং ব্রিগেড যেমন প্রশ্নফাঁস আটকাতে পারেননা তেমনি এই ঘোষণাটুকুও করতে পারেন না।

প্রতিটা বাড়িতে যাদের এই অর্ধেক পরীক্ষা হওয়া পরীক্ষার্থী আছে তাঁরাই বিষয়টা বুঝবেন। একটা হাসিখুশি ছেলে বা মেয়ে কিভাবে গুম মেরে যাচ্ছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের ইগোর জন্য তাদের ভবিষ্যৎ কি অবস্থায় দাঁড়িয়ে। দুটো পরীক্ষার মধ্যে প্রায় তিন মাসের ব্যবধান। এর মাঝে পড়ার ইচ্ছেটুকুও থাকে? অথচ শিক্ষামন্ত্রী একবারের জন্যও বলছেন না এদের ভবিষ্যৎ কি। ছেলে মেয়ে গুলো কার্যত বিনা দোষে সাজা ভোগ করছে। একের পর এক সম্ভাব্য তারিখ লার হচ্ছে। আর তিনদিন আগে জানাচ্ছেন তাঁরা পরীক্ষা হবেনা। হ্যাঁ আমরাও পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝি। আর সেটা বুঝেই বলছি, গোটা বাংলার এই উচ্চমাধ্যমিক ছেলে মেয়ে গুলোর মানসিক সুস্থতার জন্য অন্তত একবার ঝেড়ে কাশুন। হয় টেস্টের মার্কস বসিয়ে রেসাল্ট দিন, নয়ত পরীক্ষা গ্রহণের কোনো ব্যবস্থা হোক। রাজ্যে এত পুলিশ কমব্যাট ফোর্স, যারা সাংবাদিক পেটাতে, গাড়ির ড্রাইভার পেটাতে, সাধারণ মানুষকে হ্যারাস করতে সিদ্ধহস্ত তারা সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মেনে পরীক্ষা করাতে পারবেন না? আচ্ছা না হয় অত্যুৎসাহি কয়েকটা গাড়োয়ানকে দেবেন লাঠির ঘা। আমার ভাইকে পরীক্ষাকেন্দ্রে দিতে গিয়ে আমিও না হয় খাবো কয়েক ঘা। তাও পরীক্ষা হোক।

এই সরকারের আমলে নাকি শিক্ষাব্যবস্থার প্রচুর উন্নতি হয়েছে। হ্যাঁ দেখার মতো প্রচুর স্কুল কলেজ বিল্ডিং হয়েছে। একেকটা বলকে দশ বারোটা স্কুল। তাহলে পরীক্ষাকেন্দ্র ভাগ করে একশো দেড়শ ছেলে মেয়ে নিয়ে কেন পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়? তাহলে কি এসএসসি ঝুলিয়ে রেখে কিরম শিক্ষকের অভাব সেটা প্রকট হয়ে যাবে? তা নিয়ে বিরোধীরা রাজনীতি করবে? আর সেই ভয়ে কিনা আপনারা পরীক্ষা নিতে ভয় পাচ্ছেন? বিরোধীরা রাজনীতি করবে। কারন বিরোধীদের কাজ ওটাই। আপনিও করেছেন, এখন বিরোধীরাও করবে। রে রে করে তেড়ে আসবে। সে তো মোদীজিও দুহাজার বারোতে পেট্রোলের দাম নিয়ে হইহল্লা করতেন। এখন আশি পর করিয়েও পুরো চুপ। কিন্তু বিরোধীদের ভয়ে পরীক্ষা নিচ্ছেননা সেটাও কম লজ্জার নয়।

লেখাটা শেষ করব যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেটা দিয়েই। এখন প্রতিটা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীই ফাঁসির আসামি। তারা জানে পরীক্ষা হবে। কিন্তু কবে হবে কেউ জানেনা। রোজ বই খুলে বসছে কিন্তু নজর টিভির দিকে। কখন কোন মন্ত্রী কি বলছে। আসতে আসতে বাচ্চাগুলো এক একটা মানসিক রোগিতে পরিনত হচ্ছে। না দিনে ভালো করে থাকতে পারছে,না রাতে ঘুম হচ্ছে। সামনে জাতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকা। তার চিন্তা। বাকি বোর্ডের ছেলেমেয়েরা নির্বিঘ্নে প্রস্তুতি নিতে পারছে, কারন তাদের পরীক্ষা হবেনা তা ইতোমধ্যে ঘোষণা হয়ে গেছে। কিন্তুএদের ভবিষ্যৎ কি? তাই সরকার বাহাদুর দয়া করে ভবিষ্যৎ নিয়ে না খেলে একটু সঠিক সিদ্ধান্ত নেন। বাচ্চা গুলো সুস্থ থাকুক।

No comments:

Post a Comment