নেপটিজম সে আবার কি, আমরা চিনি স্বজনপোষন - Benami Diary

Tuesday, June 23, 2020

নেপটিজম সে আবার কি, আমরা চিনি স্বজনপোষন


অনেকদিন পর ব্লগে লিখতে বসলাম। নেপটিজম নিয়ে এখন বাজার গরম। তবে আমি এবার লিখব স্বজনপোষন নিয়ে। ভেতো বাঙালি, বেশি ইংরেজি না ঝেড়ে মাতৃভাষায় লেখাই শ্রেয়। তা কথা হল স্বজনপোষন। প্রত্যেকে এখন স্বজনপোষন নিয়ে বড় বড় প্রবন্ধ লিখছেন। এমন মানুষরাও লিখছেন যাদের ছোট থেকে ওই স্বজনপোষনের ফসল হিসেবেই জানি। আবার এখন পেশায় শিক্ষকতার সাথে যুক্ত ছিলাম তাই এটা একটু অন্য আঙ্গিকে দেখার চেষ্টা করব। মিলে গেলে কমেন্টবক্স খোলা, আর না মিললে গালি গুলো ভদ্র ভাষায় নাহয় দেবেন।

বাঙালি ছাপোষা পরিবারের সন্তান মানেই স্বজনপোষনের স্বীকার। আজ্ঞে হ্যাঁ প্রতিটা ছেলে। ছোট বেলায় ক্রিকেট খেলেনি আমাদের প্রজন্মের এমন ছেলে পাওয়া দুষ্কর। আর খেলার মাঠে ব্যাট আর বল যাদের বিশেষত ব্যাটটা যাদের তাদের আলাদা একটা কদর ছিল। আর আপনি যদি কন্ট্রিবিউশন না দিতে পারেন তবে সারাদিন ফিল্ডিং করেই কাটাতে হবে এটা কিন্তু শিওর। তারপর খেলা শেষে চললেন টিউশন পড়তে। টিউশনে আবার এসব হয় নাকি? হয় বাবু হয়। একটু দেখতে ভালো গায়ের রং ফর্সা মেয়ে আর শ্যামলা গায়ের রং যার সেই মেয়েকে জিজ্ঞেস করুন সব গড়গড় করে বলে দেবে। আর ছেলে মেয়ে যদি স্কুল টিচার বা প্রভাবশালী কারোর পুত্র কন্যা হয় তাহলে তো বলারই নেই। হয়ে গেল। আর গরিব বাবার গোবেচারা ছেলে ওই টিউশনের টাকা তুলতে যে বাবাকে সারাদিন খেটে মরতে হয় সেই ছেলে জানে যে টিউশন গিয়ে কি শিখল সে। স্কুলের ক্লাসরুমেও কিন্তু একই অবস্থা। যদি হন কোনো প্রভাবশালী বা অন্য কোনো টিচারের ছেলে, তাহলে আপনার আলাগ হ্যায় সোয়াগ। আর নইলে আপনি ঘন্টা। এরপর ধরুন মেধাবী আর গবেট। এডুকেশনের বই বলে যেগুলো গবেট সেগুলোকে একটু বেশি নজর দিন আর বাস্তব বলে যেগুলো গবেট সেগুলোকে দু চার থাপ্পড় আর একটু বেশি করে ইগনোর করুন। যে শিক্ষক বিএড বা ডিএলএডে ওই স্লো লার্নারদের নিয়ে চারপাতার উত্তর নামিয়ে ৮ সিজিপিএ নিয়ে এসেছে সে কিন্তু সমানুপাতিক হারে উপরোক্ত কর্মটিও করে। আমি নিজেও এর ব্যতিক্রম নই কারন সিস্টেম। কলেজে স্যারের বউ বা শালী, ব্যাস কে পায় আপনাকে। না এলেও ক্ষতি নেই, না লিখেও ইন্টারনালে গাদা গাদা নম্বর। আর পয়সা জলের মত দিয়ে আপনি আমি পাবো অশ্বডিম্ব। তবে এসবে আবার তেলের গুরুত্বও অপরিসীম। ইউনিভার্সিটি যান, গাইডের বাড়ির বাজার আর মেয়ের টিউশন পড়িয়ে দিন। চিন্তা নেই ডিজার্টেশন আর থিসিস এক চানসেই হয়ে গেল। নইলে ফক্কা।

এতো গেল ছাত্রাবস্থা। এরপর চলুন চাকরিতে। নানা সরকারি চাকরি নামক ডুমুরের ফুল নয়। বেসরকারি চাকরি। আপনি বসকে তেল লাগান আর বিনা কাজে চলতে থাক অ্যপ্রাইসাল। আর তেল না লাগলে কি হবে সে আপনি বিলক্ষণ জানেন। বসের ম্যাট্রিক ফেল ছেলে বউ সালা আপনাকে দেবে জ্ঞান। আর আপনি মাস্টার্স করে শুনবেন ওইসব চুল। চাকরিতে আমি বাঙালি তুমি বিহারী। হেহে অফিসের বাঙালিটাকেই তুলে ধরব। তুই সালা বিহারী যতই কাজ কর খাবি তো সেই কাঁচা খিস্তি। কাজে বাঙালি বিহারী, মারাঠি বিহারী এসব করে আপনি বলতে আসেন বলিউডের স্বজনপোষন নিয়ে? চাকরির আর যদি অভিজ্ঞতা বলি তাহলে একটা মহাভারত লেখা যাবে। আর আপনাদের জন্য কমেন্টবক্স তো খোলা। সরকারি হলে যদি হন তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী, তাহলে সে যতই শিক্ষিত হন আর যাই হন, আপনার ভবিতব্য ওই নাম ধরে তুমি ডাকেই। ছেলে মেয়ের বয়সী উচ্চপদের ( পড়ুন উচ্চবর্ণের) কর্মীদের ডাকবেন স্যার আপনি বলে, উল্টে তুমি আর নামধরে ডাক শুনে শান্তিতে থাকবেন। চা দোকানে বা ক্যান্টিনে শ্রেণী অনুসারে কদর আর বসার জায়গা। ভুল করেও উচ্চ শ্রেণীতে বসার উপায় নেই। আর অবসরের পরেও একই সিস্টেম। উচ্চপদের প্রাপ্য পেতে তিনদিন লাগলে নিম্ন পদের সেটা তিন বছরও হতে পারে।

শিক্ষা চাকরি, এরপর আসুন মৃত্যু। আপনি ছাপোষা বাঙালি। মরলেন আর ভাবলেন আহা কি শান্তি। যদি এটা ভাবেন তাহলে আপনি একটু পাক্কা বলদ (না না যেটা ভাবলেন সেটাই)। মরেও শান্তি নেই। ছেলে পুলের একটা ডেথ সার্টিফিকেট জোগাড় করতে জীবন শেষ। পোড়ানোর সময় হোক বা কবর দেওয়া পয়সাওয়ালা হলে আলাদা কদর আপনার বেলায় আলাদা। পুজোর মন্দিরে যদি হন কমিটির কেউ তাহলে পুজো দেবেন অঞ্জলি দেবেন সামনে থেকে, আর কেউ না হলে অঞ্জলীর ফুলটা হয়ত দেবীর পায়েও হয়ত পড়বেনা। প্রসাদ খেতে গেছেন আপনার খাতির আলাদা আর তেনাদের আলাদা। তাই দাদা স্বজনপোষনটা শুধু বলিউডে নয় আপনার বাড়িতেও। কারন বড় ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করা ছেলেটা বাড়ির ফুলবাবু, খাটে পায়ের ওপর পা তুলে হেডফোনে গন শুনবে আর বাড়িতে থাকা ছেলেটা খাটাখাটনি করে কিছু বললেও তার হয়ে কিস্যু বলবেন না। আর সেই ছেলেও কিন্তু নেপোটিজম নিয়ে গরুর রচনা নামিয়েছে। লেখাটা শেষ করব একটা অন্যরকম অভিজ্ঞতা দিয়ে। তখন বিলাসপুরে পড়ি। খড়গপুর থেকে মুম্বাই মেলে যাচ্ছি। তৃতীয় এসি কামরা। পরনে একটা পুরোনো হাফ প্যান্ট আর একটা টিশার্ট। টিশার্টটাও দু এক জায়গায় ছেঁড়া। পিঠের ব্যাগটাও ছেঁড়া। কামরায় উঠে নিজের বার্থে বসতে যাবো তখন পাশের এক ভদ্র লোকের বাক্যবান, "এটা এসি কামরা"। অর্থাৎ দেখে যদি ভদ্র না মনে হয় এবং আপনার পরিধান দামি না হয় তাহলে আপনার পয়সা থাকলেও কিন্তু এসিতে চড়তে পারবেন না।

6 comments:

  1. সুন্দর; স্বজন পোষণ সেই আদিকাল থেকেই চলে আসছে

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই তো আমাদের সংস্কৃতি

      Delete
  2. Well said.....and also bhuktobhogi.....

    ReplyDelete
  3. একদমই তাই...
    স্বজনপোষণ সব জায়গায় আছে...

    ReplyDelete
    Replies
    1. জন্ম থেকে মৃত্যু, সর্বত্র

      Delete