বলিউড যাদের মনে রাখেনি, আজকের আলোচনায় পরেশ রাওয়াল - Benami Diary

Sunday, June 28, 2020

বলিউড যাদের মনে রাখেনি, আজকের আলোচনায় পরেশ রাওয়াল











Veer Chowdhury

১৯৯৭ সাল। 
বলিউডে তখন সুপারহিট ফিল্মের ঝড় চলছে।
বর্ডার অলটাইম ব্লকবাস্টার।
দিল তো পাগল হ্যায়,ইশক,জুড়ুয়া,হিরো নং ১,পরদেশ,জিদ্দি,জুদাই এসব হিট ফিল্মে তখন বলিউড সরগরম। কেউ খবরও রাখেনি খুব চুপিসারে একজন অভিনেতা কিভাবে বলিউডে ইতিহাস তৈরী করে গেলেন এই ১৯৯৭ সালেই নিজের অভিনয় দিয়ে। কি করে খবর রাখবে এই চাটুকার মিডিয়া বা সেলেববেষ্টিত বলিউড পাপারাজ্জিরা!! কারন বলিউড বক্স অফিসের মতে সিনেমাটা ফ্লপ। তাই তারাও ইন্টারেস্ট দেখায়নি। অভিনেতার সারা জীবনের সেরা অভিনয়টা তাই আজো বহু বহু লোকের কাছে অজানা হয়েই রয়ে গেছে। এমনকি ইউটিউবেও এই সিনেমার গানগুলো বাদ দিয়ে অন্য কোনো রিভিউ বা সিনেমাটার বিশ্লেষণও নেই।
তবে কেউ খোজ না রাখলেও সিনেমাটা ফ্লপ হলেও এই সিনেমাটা জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিল।
চলুন জেনে নি কেন এই সিনেমাটা তখন ইতিহাস তৈরী করেছিল? আর কেনই বা এই সিনেমাটা এখনো বলিউডে জীবন্ত ইতিহাসের দলিল হয়ে রয়ে আছে?

আজ ২০২০ তে বলিউড অনেক অনেক এগিয়ে গেছে। গে-লাভ নিয়ে সিনেমা হচ্ছে প্রচুর। ট্রান্সজেন্ডার নিয়েও বাংলা সহ হিন্দিতেও ফিল্ম হচ্ছে। কিন্তু ভাবুন তো ১৯৯৭ সাল। তখন ইন্ড্রাস্ট্রিতে হিরোদের রমরমা বাজার। হিরোইন বা ভিলেইন বা কমেডিয়ান কাউকেই বিশাল কিছু পাত্তা দেওয়া হত না। সেখানে একটা সিনেমার মুখ্য চরিত্র একজন "হিজড়ে"!!! ভাবতে পারছেন?

হ্যা আমি বলছি ১৯৯৭ সালে রিলিজ হওয়া ভাট প্রোডাকশন হাউজের "তামান্না" সিনেমাটার কথা। অসংখ্য ফেসবুক ফিল্মি বোদ্ধা হয়ত নামই শোনেনি সিনেমাটার। যার মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন দ্য লেজেন্ড পরেশ রাওয়াল। হ্যা ঠিকই ধরেছেন, যে পরেশ রাওয়াল কমেডি রোল করে, আপনাদের হাসায় সেই পরেশজী। ১৯৯৭ সালে পরেশ রাওয়াল প্রচুর ক্যামিও, বা সাইড রোল বা নেগেটিভ রোল করতেন। হঠাত তার কাছে এই রোলটার অফার আসে, এবং তিনি বিন্দুমাত্র না ভেবেই হ্যা বলে দেন।

তনুজা চন্দ্রার লেখা এই সিনেমার ডিরেক্টর ছিলেন মহেশ ভাট। এই সিনেমা পুরোটাই পরেশ রাওয়াল অভিনীত "হিজড়ে" চরিত্র টিক্কুর গল্প। যার মা ছিলেন একজন বলিউড অভিনেত্রী, কিন্তু বয়স হয়ে যাওয়ায় তিনি আর ফিল্ম পেতেন না, ডিপ্রেসড থাকতেন। তার সন্তান হল এই টিক্কু। যে ছোট থেকেই ট্রান্সজেন্ডার। সে বলিউডের অভিনেত্রীদের মেকাপ করাত। টিক্কুর মা একদিন হঠাত মারা যায়, টিক্কু তাকে দফন করতে যাওয়ার সময় হঠাত খুজে পায় ডাস্টবিনে পড়ে থাকা এক শিশুকন্যাকে। তারপর টিক্কুর জীবন বদলে যায়। সে মানুষ করতে থাকে সেই শিশুটিকে, তাকে সাহায্য করে তার বন্ধু মনোজ বাজপেয়ী। মেয়েটি অর্থাৎ তামান্নাকে পড়াশুনার জন্যে হোস্টেলে পাঠায় টিক্কু। তামান্না সেখান থেকে ফিরে এসে হঠাত আবিস্কার করে তার পিতা আসলে একজন হিজড়ে। তামান্না খুব শকড হয়। পরে ঘটনাচক্রে জানা যায় তামান্না আসলে অনেক বড় পলিটিশিয়ানের একমাত্র মেয়ে। যাকে তার মা ডাস্টবিনে ফেলে এসছিল। এরপর কাহিনী অন্যদিকে মোড় নেয়। অনেক অত্যাচার হয় টিক্কুর উপর। কিন্তু বাবা মেয়ের ভালবাসাই শেষ অব্দি জিতে যায়। 

এই সিনেমায় পরেশ রাওয়ালের ভয়েস শুনলে আপনারা চমকে উঠবেন। কতটা ডেডিকেশন থাকলে একজন অভিনেতা নিজের ভয়েস মডুলেশন এতটা পাল্টাতে পারে দেখার বিষয় সেটাই। তারপর রয়েছে হিজড়া চরিত্রে পরেশজীর বডি ল্যাংগুয়েজ আর অভিনয়। যা দেখলে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকবেন আপনি।

কিন্তু এত কিছুর পরেও এই সিনেমা ফ্লপ। এই আমাদের অডিয়েন্স। ভাল সিনেমার কদর বলিউড বা অডিয়েন্স কোনোদিনও করেনি। যে রোল নিয়ে অভিনয় এই ২০২০ সালেও কোনো অভিনেতা করতে সাহস পায়নি, পরেশ রাওয়াল আজ থেকে ২৩ বছর আগে সেটা অবলীলায় করেছেন। 

যারা দেখেছেন বা দেখবেন এই সিনেমাটা তাদের বলি, লাস্টে একটা সীন আছে যেখানে তামান্নার আসল বাবা তাকে গলা টিপে মারতে যায়, সেখানে পরেশ রাওয়াল বা টিক্কু চলে আসে। ওই সীনে পরেশ রাওয়ালের অভিনয় কাদিয়ে দেবে আপনাকে। 

পরেশ রাওয়ালদের মত অভিনেতাদের লোকে মনে রেখেছে কমেডিয়ান বা নেগেটিভ রোল হিসেবেই।
কজন মানুষ তার অভিনয় সত্ত্বাকে চিনেছে সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। রোজ দেখি নতুন কেউ ভাল অভিনয় করলে তাকে নিয়ে হাজারো পোস্ট,ছবি কত কি।। আররে আগে আমাদের বলিউডের আসল লেজেন্ডদের চিনুন। তাদের প্রশংসা করুন।
নইলে কোনোদিন তারা হয়ত চলে যাবে, তাদের নামও আস্তে আস্তে ফিকে পড়ে যাবে হয়ত, তাদের অবিস্মরণীয় কাজগুলো আর কারুর মনে থাকবেনা হয়ত। 

তামান্না- এ মাস্টারপিস, এ ইন্সপাইরিং অ্যাকটিং।

No comments:

Post a Comment