ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট - Benami Diary

Wednesday, April 1, 2020

ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট




সকালে উঠেই রতন বাবু চমকে উঠলেন।গলির মুখটা পেরোতেই দেখতে পেলেন জিনিসটা। নাহ জিনিসটা আর কিছুই নয় এটি অল্পবসনা এক যুবতীর দেহ। চিনতে একটু কষ্ট হল। মুখ নিচের দিকে করে পড়েছে। তাই স্তনটাও দেখা যাচ্ছেনা। খুব বেশি হলে বয়স হবে বছর পঁচিশেক। মাস খানেক আগেও মেয়েটা সকালে অফিস বেরোলে চায়ের দোকানে বসে বন্ধু বান্ধবদের সাথে বসে উত্থিত বুকের খাঁজটার দিকে তাকিয়ে থাকতেন। বন্ধুদের নিজের মেয়ে জামাই ব্যাঙ্গালোরে কিভাবে জীবন যাপন করছে সেই জ্ঞান বিতরণ করার সাথে সাথেই আজকালকার মেয়েগুলো কিভাবে বখে যাচ্ছে সেই নিয়েও এক আধটা রিসার্চ পেপার দিয়ে দিতেন। রতনবাবু সবদিনই একটু বেশিই রসিক মানুষ কিন্তু এই মেয়েটি যেভাবে ওঁদেরকে পাত্তা না দিয়েই মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়াত সেটা মোটেই সহ্য হতনা রতনবুর। আর মেয়েটাও লজ্জা শ্রমের মাথা খেয়ে সেই চায়ের দোকানটার সামনেই বুকের খাঁজ দেখিয়ে ঘুরে বেড়াত সেটা চোখের সুখ দিলেও কেন জানিনা ওঁদের বিশেষ সহ্য হতনা। এমনকি ওঁদের পাত্তা না দিয়ে যেভাবে সামনে দিয়ে সিগারেট কিনে নিয়ে যেত সেটা ওঁদের পৌরুষে বড়ই আঘাত দিত। কোথাও থেকে জানতে পেরেছিলেন মেয়েটির নাম পৃথা। পৃথা সামন্ত। বুড়ো বয়সে নাতির কাছে শিখেছিলেন কিভাবে ফেসবুকে কাউকে খুঁজতে হয়। নিজের মেয়ে জামাইকে রিকয়েস্টও পাঠিয়েছিলেন। আর সাথে পৃথার মুখবইএর দেওয়ালের ছবিগুলো শুধু রতন বাবু নয়, তাঁর অনেক বন্ধুদেরও পড়ন্ত বেলায় সেই সুখ দিত, যার দাবি লোকাল ট্রেনের কামরায় আকছার দেখা যায়। বাস্তবে ফিরলেন রতনবাবু। এখুনি খবর দিতে হবে পুলিশে। সাথে সাথে পাড়ার পরিচিত লোকদেরও ডাকলেন। নিজেদের প্রাচীরের ভেতর থেকেই হরেকমাল দশটাকার মতন একের পর এক বিশেষজ্ঞদের মতামত উঠে এল।
_____________

লকডাউনটা উঠেছে দিন দশেক হল। রতনবাবু পাড়ার মোড়ে হে হে কেমন দিলাম মার্কা হাসি হেসে বলতে লাগলেন "কি কথা লাগল তো? আমি আগেই বলেছিলাম মে মাসের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।" লকডাউন উঠলেও জীবন এখনো অনেকাংশে শ্লথ। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। বেচারা নান্টু এক প্যাকেট সিগারেটের দাম একশো চল্লিশ কেন করেছে সেই নিয়ে তর্ক বিতর্ক চলছে। সরকার কিভাবে সুদের হার কমিয়ে চাকরিজীবী আর পেনশনারদের পকেট কাটছে সেটা নিয়ে এক দীর্ঘ বক্তৃতা দিলেন সুনীলবাবু। মাঝে দিলিপবাবু মিনমিন করে বেসরকারি কর্মীদের কথা তুলতেই রতনবাবু চুপ করিয়া দিলেন- "ওসব ছাড়ুনতো, ওরা তো বেতনও পেয়েছে, আবার চাকরিও যায়নি।" শুধু নান্টুই বোঝে এই চা সিগারেট বেচে আর যাই হোক তিনজনের সংসারেও ডালভাত আলুসেদ্ধর বেশি কিছু দেওয়া সম্ভব নয়। খবরে দেখাচ্ছে একের পর এক কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কেউ বা দুমাসের বেতন দিতে গিয়ে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। মহামারী জীবন নিয়েছে হাজার কুড়ি মানুষের, আর অনাহারে মরেছে লাখখানেক। তাতে অবশ্য রতনবাবুর কিছুই আসে যায়না। কারন তাঁর পেনশন ঠিক ঢুকেছে। চায়ের দোকানে রাজ্যজয় করে যখন ব্যাগে প্রমান সাইজের কাতলা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন রতনবাবু, মাথায় একটা প্রশ্ন এল। অনেকদিন সামনে থেকে মেয়েটাকে দেখেননি। এমনকি ছাদে মেয়েটার অন্তর্বাসও শোকাতে দেখেননি বেশ কিছুদিন হল।নতুন পোস্টও আসেনি, পুরোনো ছবিগুলো দেখে দেখে রতনবাবুর চোখ পচে গেছে। অথচ গত পরশুও ওই রুমে আলো জ্বলতে দেখেছেন রাত্তিরে। কাউকে জিজ্ঞেসও করতে পারছেন না। ভাবলেন একবার ঘরে ঢুকে ফ্রেন্ডলিস্ট হাইড করার অপশনটা নাতির কাছে শিখে নেবেন। তিনি দেখেছেন, বৌমার কোনো বন্ধুকে তিনি দেখতে পাননা, কেবল তাঁর বন্ধুদের ছাড়া।তারপর একটা ফ্রেন্ডড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করবেন কি হল ওর। সেরম হলে কিছু উষ্ণ কথাবার্তাও চালাচালি হতে পারে। একদিন ইন্দুবাবু আড়ালে বলেছিলেন উনার নাকি ওরম কিছু ফ্রেন্ড আছে।

-----------------

ঘড়ির কাঁটায় পাক্কা বারোটা। গলাটা শুকিয়ে এল পৃথার। জলের বোতলটা হাতড়ে খুঁজতে চেষ্টা করল। কিন্তু পেলনা। জানালার বাইরে চাঁদ উঠেছে। অন্ধকারের চাঁদের আলোয় আকাশটা একদম পরিষ্কার হয়ে গেছে। চারিদিকের প্রকৃতি নিস্তব্ধ। দেখে বোঝার উপায় নেই দিনের বেলায় কি চলছে চারিদিকে। একদম শুভ্র চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে চারিদিক। অনেক কষ্টে হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে পেল জলের বোতলটা। তার ইচ্ছে হল অনেকদিন বাদে এই রাতে চাঁদের আলোয় একবার ছাদে গিয়ে বসতে। টলতে টলতে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠে এল পৃথা। আজ একটু বেশিই খাওয়া হয়ে গেছে। শরীরের প্রতিটা নার্ভ অবশ হয়ে আসছে তার। চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে পুরো ছাদটা। চারিদিকে আলোর বন্যা হয়ে গেছে। এই আলো শান্ত শুভ্র। পৃথা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলনা। টলতে টলতে বসে পড়ল। বুক ভরে নিশ্বাস নিয়ে নিল। সিগারেটটা ধরিয়ে একবার জোরে টেনে নিল। হঠাৎ করেই পুরোনো কথাগুলো মনে পড়ে যেতে লাগল তার। বেশ ভালোই চলছিল সব। সকাল সাড়ে নটায় ঘুম থেকে ওঠা, যেমন তেমন করে স্নান, একবাটি ম্যাগি গিলে অফিস দৌড়ানো। অফিসে গিয়ে সারাদিনের খাটনি, বসের চেল্লামিল্লি, স্ট্রেস কমানোর জন্য সিগারেট, দিনের শেষে দু পাত্তর এলকোহল পান করে ঘুম। কিন্তু হঠাৎ করেই ছন্দপতন। মহামারী এলো দেশে। তারপর সব বন্ধ। অফিস বন্ধ। পনের হাজারের চাকরিটাও গেল।তবে বস বলেছেন কোম্পানি থাকলে যেমন করে হোক কিছু কাজ দেবেন। বাড়ি যাওয়ার উপায় নেই। আর কয়েকদিন পর কোম্পানীটাই বন্ধ হয়ে গেল।খাবার দাওয়ার যা ছিল তাতে হপ্তা খানেক চলেছে। মাসের বেতনটা পেয়ে পৃথা বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিল। অন্তত ভাইটা যাতে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকে। বাড়ির মালিক ইউরোপ থেকে ফিরতে পারেনি, তাই এখন বাড়ি ভাড়া দেয়ার চাপ নেই। একদিন পাড়ার দোকানের ছেলেটাকে দিয়ে কয়েক প্যাকেট ম্যাগি আনিয়েছিল পৃথা। ওই ম্যাগি আর পার্টি করার জন্য পরে থাকা মদ সিগারেট নিয়েই দু মাস কোনো রকমে চালিয়েছে। না ফোনে রিচার্জ ছিল, না জামা কাপড় কাঁচার ডিটারজেন্ট। আজ সব কিছু দূরে সরে গেছে। নাহ পৃথার সেই রূপ আর নেই আজ। যা দিয়ে দেখে প্রত্যেকে ঢলে যেত তার দিকে। চোখের নিচে কালি পড়েছে। স্তন ঝুলে গেছে। গোটা শরীর জুড়ে লোমের আধিক্য। শরীরে অপুষ্টির ছাপ স্পষ্ট। নাহ পৃথার সহ্য হলনা আর। এই পৃথাকে গোটা ভার্চুয়াল দুনিয়া তো দূর, পৃথা নিজেই চেনেনা। পাশের বাড়ির ওয়াইফাই দিয়ে পৃথা ফোনটা চালাল। নোটিফিকেশন এসেছে। Ratan Chaudhury Sent you friend request। পৃথা নিজের মনেই হাসল। বুড়ো না দেখতে পেয়ে শেষে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টই পাঠিয়ে দিল। নাহ আর ভাবলনা পৃথা। একবার জোরে স্বাস নিল। নিজের বুকের দিকে তাকাল।ক্লিভেজটা আরেকটু পরিষ্কার করল। রিকুয়েস্টটা স্বীকার করেই উঠে দাঁড়াল। তারপর ধপ করে একটা শব্দ।
রতন বাবু দেখলেন সব কাজ শেষ। নাহ একটা বাকি আছে, এখুনি বাড়িতে গিয়ে রিকোয়েস্টটা ক্যান্সেল করতে হবে।নইলে ইজ্জতের সব শেষ হয়ে যাবে।
©Avi Nandan

No comments:

Post a Comment