অনুপ্রবেশ নাকী ভাষাগত নিরক্ষরতা? - Benami Diary

Sunday, September 16, 2018

অনুপ্রবেশ নাকী ভাষাগত নিরক্ষরতা?

আমি হিন্দীভাষার বিরোধী বা অন্ধ বাংলাভাষা প্রেমী এই দুয়ের কোনো অপবাদটাই আমাকে কেউ দিতে পারবেন বলে মনে হয়না।জন্মসূত্রে যে ধর্ম, বর্ন,  সম্প্রদায়েরই হইনা কেন জন্ম আমার এই বাংলাতেই। তাই "মা" কে মা ই বলি, "বাবা" কে বাবা,  বাকী সাধারন সব শব্দই বাংলাতেই বলি। আর হ্যাঁ গালীটাও বাংলাতেই দেই।গালীর প্রসঙ্গ যখন আসলোই তখন এই ভাষাগত ডমিনেন্স এর বিষয়টা খুবই প্রকট হয়ে ওঠে। পাঠকগন অতিশয় ভদ্রলোক,  আর আমিও নিতান্ত অত্যন্ত অভদ্র নই,  তাই বাস্তব উদাহরন না দিলেও চলবে। কীন্তু এটা অনস্বীকার্য যে ট্রেনে বাসে আজকাল যেসব গালী শুনি সেগুলির বেশীরভাগই হিন্দী।
বাঙালির চির সুনাম আছে যে আমরা সকলকেই আমাদের টেরিটরি তে সাদরে গ্রহন করি, তাঁদের প্রস্ফুটনে সাহায্য করি এবং পরবর্তীতে আছোলা বাঁশটি নিজের পশ্চাদে স্থাপন করি। এই বাংলায় কর্মসূত্রে প্রচুর বিহারী় এবং অন্যান্য প্রদেশ থেকে চিরকালই লোকজন আসে। আগে দেখা যেত যে সসব মানুষ বাংলাতে এসে ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলার চেস্টা করত এবং আমরা পরিস্কার বাংলাতেই কথা বলতাম।উল্লেখ্য ছোটোবেলায় এক কাশ্মিরী ভদ্রলোক আসতেন শাল বিক্রি করতে প্রতি শীতেই। আমরা তখন কীন্তু তাঁর সাথে বাংলাতেই বিকিকিনি করতাম।পরে মহান সলমন খান-আমির(?) খানদের সৌজন্যে দু বর্ন হিন্দী শিখে বছরের ঐ এক সময় দু একটি হিন্দী বাত বোলকেনা অপেক্ষা এরফলে কী হল যে তিনি বুকে একটু বল পেলেন দু তিন খানা কাচ্চা বাচ্চার মুখে হিন্দী শুনে,  এবং পরবর্তীতে যখন তাঁর সুপুত্র ব্যাবসায় নামলেন এবং এলেন তিনি বাংলা বলা তো দুরের কথী বাংলা বোঝার প্রচেস্টাও ছেড়ে দিলেন।তিনি এখনও বছরের ঐ সময় আসেন ব্যাবসা করেন চলে যান।কীন্তু তাঁর বাবার সাথে যে একটা পারিবারিক বন্ধন অনুভব করতাম সেচা ছেলের সাথে কোনওদিনই করিনি।
প্রসঙ্গটা অন্য দিকে চলে যাচ্ছে তাই লাইনে আসা যাক।এই লাইনে আসা।হ্যাঁ আমরা মোটেই বলবনা যে প্রসঙ্গে ফিরি, কারন ঐ নিজের গাছের পেয়ারার চেয়ে অন্যের গাছের পেয়ারা স্বাদু।এখন লক্ষ্য করে দেখবার বিষয় যে আমরা ছোটো বেলায় এক বর্ন বাংলা ছেড়ে হিন্দীতে কথা বলতে গেলে ঝাড়ই খেয়েছি।কারন বাবা মার একটা সুপ্ত বাসনা ছিল যে বাংলা ভাষায়কে যাতে সম্পুর্ন ভাবে রপ্ত করতে পারি,  আবার ইংরাজির ক্ষেত্রেও একই ছিল।অথচ আজকাল ছেলে মেয়েরা বাংলা না বলে হিন্দী বা ইংরাজী বললে বাবা মায়েরা অদ্ভুত রকম প্রফুল্ল অনুভব করেন। অথচ সেই সব ইংরিজি এবং হিন্দী কতখানি সঠিক বা বেঠিক সেটা লক্ষ করেন না।হলপ করে বলতে পারি দুক্ষেত্রেই সঠিকের পরিমানটা ৫০ শতাংশের বেশি নয়। এর কারনটাও অত্যন্ত সোজা। কারন তাঁদের ভাষার ওপর সেই দখলটাই নেই।

এখন একটা কথা অত্যন্ত বেশী পরিমানে শোনা যায় পূর্বেকার মানুষের ইংরাজির ওপর দখলটা আমাদের চেয়ে অনেক বেশী ছিল।আমার মাধ্যমিক পাশ দাদুর ইংরিজি চিঠি পড়তে এম. এ.  পাশ নাতিকে ডিকশনারী দেখতে হয় (দাদুর সৌভাগ্য তিনি এই দিনটা দেখার আগেই অমৃতলোকে পাড়ী দিয়েছেন তিনি)। এটার কারন মুলত দুটি-
১। বাংলাকে যথাযথ গুরুত্ব না দিয়ে শুধুমাত্র ওপর ওপর পড়ানো এবং অন্য ভাষা (পড়ুন ইংরাজি) ভাষা পড়ানোর ক্ষেত্রে সঠিক অনুবাদের ব্যাবহার না করা
২। আক্ষরিক এবং বিশুদ্ধ ভাষার (ইংরাজি, হিন্দী এবং কীছু ক্ষেত্রে বাংলাও) পরিবর্তে ব্যাবহারিক ভাষার ওপর জোর দেওয়া।
এর ফলাফল হচ্ছে মারাত্বক এবং আত্মঘাতী। কীরম সেটা বোঝানোর জন্য প্রথমে একটি উদাহরন দেব।আমার এক পাতানো বোন জন্মেছিল রাজস্থানে বড় হয় পশ্চিমবঙ্গে।এবার ছোটোবেলায় বেশকীছুদিন রাজস্থানে ছিল,  পরবর্তীতে আসানসোল এবং বাঁকুড়ায় থাকে এবং বড় হয়।এখন তাঁর প্রাথমিক ভাষার ব্যাবহার দেখলে চমকে যেতে হয়,  কারন, তার প্রতিটি বাক্যে তিনবার "ও করে নাও" "এটা বুঝতে পারছনা" শোনা যায়। কারনটা কী এই তিনধরনের উপভাষাভাষী মানুষের সংস্পর্শে এসে তার সঠিক বাংলা ভাষাটিরই বিকাশ হয়নি। আজ শুধু আমার বোনই নয় আম বাঙালি পরিবারের সত্তর শতাংশ সন্তানের অবস্থা ঠিক এটিই।প্রি স্কুলিং থেকে আমরা পাঠাচ্ছি ইংরাজি মাধ্য স্কুলে, "বাবা" শেখার আগে শিখছে ড্যাড তাই ফলশ্রুতিটাও হচ্ছে সেরম।

এবার ভাষাগত অনুপ্রবেশ নিয়ে কটি মাত্র কথা বলব। কেরালা শিক্ষায় সবচেয়ে উন্নত।আমার দেখা এবং শোনা যে প্রতিটি মানুষ বিশুদ্ধ মালায়লম জানেন(সূত্র- লিজু কৃষ্ণান, শর্ট ফিল্মের নির্দেশক এবং আমার অত্যন্ত বিশেষ বন্ধু) আর আমরা বাঙালিরা? বাংলায় দু লাইন ভুলভাল হিন্দী বলে হিরো হই আর বাংলার বাইরে গিয়ে ঐ একই কাজের জন্য ট্রোলড হই। কোনো ভাষা শিক্ষাই খারাপ নয়,  কীন্তু শিক্ষাটা হবে সম্পুর্ন, সঠিক এবং মাতৃভাষার সাথে সাযূয্য রেখে। তাই বেগুন পোড়াকে বেন্গন ভর্তা বা বেগুন ভর্তা বললে সুবিখ্যাত পূজো প্যান্ডেলের নামও "হলদি কা প্যান্ডেল" হবে আর তাতে মুখ আলো করে দাঁড়াবেন আমাদের বঙ্গতনয়াই।
মা দূর্গা তুমি আমার "মা" ই থেকো প্লিজ দূর্গা মাইয়া হয়োনা, কারন বাংলা না বোঝা বাঙালিরা তোমায় "অপরাধী" ভাবতে পারে।

পুনশ্চ- লেখাটির কথা মাথায় আসে যখন আমার দু-তিনজন সহকর্মী "মেরে রাস্ক-ইয়ে-কামার" গানটির অর্থ হিসেবে বলেছিলেন রসালো কোমর। তাঁদের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞ বাঙালির হিন্দী ভাষার ওপর দখলের এই বাস্তব প্রতিচ্ছবিটি তুলে ধরার জন্য।

2 comments: