কাল সকালে হয়ত নিশ্বাসটা আরেকটু হালকা হবে, পৃথিবীটা একটু হালকা হবে। কিছু মানুষ হেরে গিয়ে হারিয়ে যাবে। খুব হালকা লাগছে নিজের। ঘন্টা খানেক আগেই শেষ বার প্রানভরে প্রশ্বাস নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলাম শুধু। তারপর চারিদিকের অন্ধকারটা কেটে গিয়ে কেবলই আলো।আমার নিথর দেহটা পড়ে আছে হাসপাতালের ঘরে। আরো তিনচার খানার সাথেই। গত পরশু শেষবার ডাক্তার দেখে গিয়েছিল। তারপর শুনেছি সেও আমাদেরই পথের যাত্রী। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হল আমার পাশের বেড থেকে দুদিন ধরেই গন্ধ বেরোচ্ছে, কিন্তু কেউ হাত দেওয়ার নেই। গত দুদিন যে মাছি গুলো ওই বেডটায় ভনভন করত তারা আজ আমার নাকের ওপর ঘুরছে। নাহ একটুও অসুবিধা হচ্ছেনা। এই হাসপাতালের এই দুটো রুমই শেষ অবধি ব্যবহারের যোগ্য ছিল। সাফাইওয়ালা নাকি মরে পরে আছে মর্গের বাইরে। বাকি রুমগুলোয় বেডের সাথে জামা কাপড় আর মৃতদেহ মিশে সে এক যাচ্ছেতাই অবস্থা। এখন শুধুই মনে হচ্ছে মরে তো গেলাম অথচ এত ভারী দেহটা কেউ সৎকার করবেনা। আমার জানালাটা দিয়ে গতকাল দেখেছি দুটো কুকুর একটা বডির হাত পা নিয়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। গত সপ্তাহে গ্রামের শেষ মানুষটাও মারা গেছে বলে শুনেছিলাম।আর এই হাসপাতালের চারটে আধমরা লোক আর ডাক্তার টুকুই বেঁচে ছিল। তার মধ্যেও আমি একজন। হাসপাতালের পুরোনো বাল্ব, নোংরা সবুজ পর্দা, মড়া পচা দুর্গন্ধ আর কয়েকটা বাঁচা মরা বডি। ব্যাস এইটুকুই ছিল জীবন শেষ কটা হপ্তা। যখন নিজে টেনে হিঁচড়ে নিজেকে হাসপাতালে আনি ব্যাংকের বইটা খুলে দেখলাম রয়ে গিয়েছিল কিছু টাকা, যা আঁকড়ে রেখেছিলাম যখের ধনের মতন শেষ দিকে কিছু খাবো বলে। না কাজে আসেনি। কাজে এসেছিল পোষা বেড়ালটা, কুচি কুচি করে খেয়েছিলাম। স্বার্থ পরের মতো একা। নাহ এটা শুরু নয়, শুরুটা আগেই হয়েছিল যখন একে একে সব্বাই অসুস্থ হল আর আমি ঘরে বন্দি হয়ে ওদের সংশ্রব এড়ালাম। ওদের শেষবার দেখিনি অবধি যদি আমিও ইনফেক্টেড হয়ে যাই। মনে আছে কতবার চিৎকার করে করে জল চেয়েছিল সব্বাই, নাহ দেইনি। দরজাটা শক্ত করে আটকে রেখেছিলাম। আর আজ আমার ডেডবডিটা খুবলে খাচ্ছে কুকুরগুলো। শেষ কটাদিন শুধু ভয় পেয়েছি কুকুর গুলোকে, ওরা বসে থাকতে দরজার ঐপারে সাক্ষাৎ যমদূত হয়ে।এই ভয়েই থাকতাম শুধু ওরা যদি কামড়ে খেয়ে নেয় আমাকে জ্যান্ত। আজ পাশের বেডের বিমলদাও বোধহয় মারা যাবে, যাক একসাথেই যাবো। ততক্ষণ একটু পোষা বেড়ালটার আঁচড় খেয়ে নেই, যাকে কেটে খেয়েছিলাম শেষদিন। বাকিদের সাথে নাহয় পরেই দেখা হবে।
Thursday, March 26, 2020
Jun 25, 2020
তিন্নি ও তার সাধের গণেশ
Apr 01, 2020
ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট
Mar 26, 2020
শেষের পর
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment