কীভাবে ঠিক হয় লোকসভায় কে কোথায় বসবেন? - Benami Diary

Saturday, June 1, 2019

কীভাবে ঠিক হয় লোকসভায় কে কোথায় বসবেন?

লোকসভা নির্বাচন এবং ফলাফল সমাপ্ত হয়ে গেছে এই বছরের মত। প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীরা শপথ গ্রহনও করে নিয়েছেন। তবে যেই ভবনে তাঁরা আগামী পাঁচ বছর বসে দেশের অগ্রগতিকে পথ দেখাবেন, সেখানে কোথায় কে বসবেন? লোকসভায় প্রত্যেক সাংসদের আসন ঠিক করেন স্পিকার। তবে স্পিকার কীন্তু তাঁর ইচ্ছা মতো আসন বন্টন করতে পারেননা। এক্ষেত্রে বলে রাখা দরকার স্পিকারকেও কীন্তু সাধারন সাংসদ হিসেবে শপথ গ্রহন করতে হয় প্রথমে।রাস্ট্রপতি লোকসভার সবচেয়ে বরিষ্ঠ সদস্য অর্থাৎ সবচেয়ে বেশীবার জিতে আসা সদস্যকে প্রোটেম স্পিকার হিসেবে নিয়োগ করেন।সাংসদদের শপথনাক্য পড়ানোর পর, সাংসদদের দ্বারা নির্বাচিত স্পিকারকে তাঁর আসন ছেড়ে দেন। আর এর আগেই প্রত্যেক সাংসদের জন্য আসন নির্ধারিত হয়ে যায়।
সদস্যদের জন্য আসন নির্ধারনের জন্য একটি সাধারন নিয়ম রয়েছে। তবে তার আগে আমাদের লোকসভার আসনগুলি চিনে নিতে হবে। স্পিকারের ডান এবং বাঁ দিকে দুটি ব্লক রয়েছে।এগুলিতে ৯৭টি করে আসন রয়েছে। স্পিকারের আসনের সামনে চারটি ব্লক রয়েছে। এতে ৮৯টি করে আসন রয়েছে। এছাড়াও যেসব মন্ত্রী লোকসভার সদস্য নন(গত লোকসভায় স্মৃতি ইরানি, অরুন জেটলী প্রমুখ), তাঁরা বিতর্কের সময় যাতে বসতে পারেন তার জন্যও আলাদা কীছু আসন থাকে। স্পিকারের ডান দিকের আসনগুলি বরাদ্দ থাকে সরকার পক্ষের জন্য, বাঁদিকেরগুলি বরাদ্দ থাকে প্রধান বিরোধী পক্ষের জন্য। মাঝখামের আসন গুলি প্রয়োজন অনুসারে সরকার ও বিরোধাদের জন্য বারদ্দ করা হয়। তবে কখনওই সরকার এবং বিরোধীদের একই বেঞ্চে ভাগ করে বসানো হয়না।
স্কুলে প্রত্যেকেই প্রথম বেঞ্চে বসার জন্য অবশ্যই চেস্টা করেছেন। কারন প্রথম বেঞ্চটিকে বেশী গুরুত্বপুর্ন মনে করা হয়। সংসদেও একইভাবে গুরুত্বপুর্ন নেতাদের জন্য প্রথম বেঞ্চটি বরাদ্দ থাকে। তবে কোন দল কতগুলি আসন প্রথম সারিতে পাবে, তা নির্ধারনের একটি সূত্র রয়েছে। সূত্রটি হল - [(দলের বা জোটের কাছে থাকা মোট আসন×প্রথম সারির মোট আসন)/লোকসভার মোট আসন]। একটা উদাহরন দিলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। এই লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ মোট ৩৫৩টি আসন পেয়েছে। আর প্রথম সারির মোট আসন সংখ্যা ২০। তাহলে অঙ্কটা দাঁড়াচ্ছে (৩৫৩×২০)/৫৫০=১২.৮৩। দশমিকের পরের অঙ্ককে পুর্নাঙ্ক করলে সংখ্যাটি দাঁড়াচ্ছে ১৩। অর্থাৎ এই জোটের ১৩ জন সাংসদ প্রথম সারিতে বসার সূযোগ পাবেন এই সংসদে। এই হিসেব অনুসারে ৫২ সদস্যযুক্ত কংগ্রেসের মাত্র দুজন বসতে পাওয়ার কথা প্রথম সারিতে। দ্বিতীয় সারির জন্যও একই ভাবে আসন বন্টন করা হয়।এভাবেই শেষ সারি পর্যন্ত আসন বন্টন করা হয়।তবে এই নিয়ম শুধু মাত্র ৫ বা তার অধিক সংখ্যা যুক্ত সদস্যের পার্টির জন্যই প্রযোজ্য।পাঁচের কম সদস্যযুক্ত পার্টি হলে স্পিকার এবং দলের নেতা মিলে আলোচনার ভিত্তিতে আসন নির্ধারন করা হয়।

লোকসভা কক্ষ

এতো গেল সংখ্যার হিসেব। কোন নেতা কোথায় বসবেন সেটাও ঠিক করেন স্পিকার। শাসক ও বিরোধী জোটের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব পান যথাক্রমে ক্যাবিনেটের চার মন্ত্রী, (প্রধানমন্ত্রী,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,অর্থমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী) এবং বিরোধী দলনেতা এবং উপ বিরোধী দলনেতা। বিরোধী বেঞ্চের প্রথম সারিতে বসেন ডেপুটি স্পিকার। এরপরও কোনও দল বা জোটের কাছে প্রথম সারির আসন বেঁচে গেলে সেখানে সেই দলের বরিষ্ঠ নেতারা বসবেন। লোকসভায় আসন বন্টনের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় বরিষ্ঠতাকে। বয়স নয়, সবচেয়ে বেশীবার নির্বাচিত হওয়া সাংসদ দের। স্পিকার কখনও কখনও বরিষ্ঠ সদস্যদের সামনের সারির আসনও বরাদ্দ করতে পারেন। যেমন গত লোকসভায় সমাজবাদী পার্টির মুলায়ম সিং যাদব এবং জনতা দল (সেকুলার) এর এইচ.ডি. দেবেগৌড়াকে প্রথম সারির আসন বন্টন করা হয়েছিল যদিও তাঁদের কাছে প্রথম সারিতে বসার জন্য প্রয়োজনীয় আসন ছিলনা।
এসব ছাড়াও লোকসভায়,  স্পিকারের একদম সামনে কয়েকজন আধিকারিকের বসার আসন রয়েছে। যেখানে লোকসভার সচিব এবং অন্যান্য কর্মীরা বসেন। লোকসভার দৈনিক কার্য্য বিবরনী এখানেই লিপিবদ্ধ হয়।
এসব ছাড়ুন লোকসভার সর্বাধিক সদস্য সংখ্যা কত জানেন? ৫৫২ জন। এর মধ্যে ৫৩০ জন সাংসদ বিভিন্ন রাজ্য থেকে নির্বাচিত হতে পারেন, ২০ জন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে, এবং ২জন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সদস্যকে রাষ্ট্রপতি মনোনীত করতে পারেন। গত বার এই রাজ্যের জর্জ নেকার মনোনীত সাংসদ ছিলেন। যদিও এই ১৭ তম লোকসভা ৫৪৩ জন নির্বাচিত এবং ২ জন মনোনীত সাংসদ নিয়ে চলবে।
এই লেখাটি নিউজপোলেও প্রকাশ হয়েছে।

No comments:

Post a Comment