তারকা থেকে মহাতারকায় উত্তরন - Benami Diary

Saturday, May 18, 2019

তারকা থেকে মহাতারকায় উত্তরন

ফুটবলে ফ্রি কিক নেওয়ার কথা বললে যে কয়েক জন খেলোয়াড়দের নাম মনের মধ্যে ভেসে ওঠে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো রবার্তো কার্লোস ডেভিড বেকহ্যাম এবং লিওনেল মেসি অবশ্যই। এঁরা প্রত্যেকেই অ্যাটাকিং পজেশানে খেলেছেন তা নয়, মিডফিল্ডার এবং ডিফেন্ডার হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই ফ্রী কিক নেওয়ার ক্ষেত্রে অসাধারন মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। একদিকে যেমন বেকহ্যামের ফ্রী কিক ছিল নয়নাভিরাম। বলে শট নেওয়ার পর তা ধনুকের মত বাঁক খেয়ে গোলে ঢুকে যেত। আবার রবার্তো কর্লোসের ফ্রী কিকের বিশেষত্ব ছিল গতি। গোলার মত শট ওয়ালের পাশ দিয়ে গিয়ে গোলের ভেতর ঢুকে যেত এত তাড়াতাড়ি, যে গোলকিপার মুভ করারও সময় পেতেন না।

বর্তমান কালের ফ্রী কিক টেকারদের নাম করলে সবচেয়ে বেশী নিউজ প্রিন্ট যাদের দুজনকে নিয়ে খরচ করা যাবে তাঁরা দুজনেই এই গ্রহের দুজন মহাতারকা। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এবং লিওনেল মেসি। এবং দুজনের খেলার ধরন এবং ফ্রী কিকের বিশেষত্বও সম্পুর্ন আলাদা। যেখানে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর মুল বিশেত্ব তাঁর গতি এবং সঠিক নিশানা, লিও মেসির বিশেষত্ব হল ফ্রী কিকের সময় বলকে হাওয়াতে মুভ করিয়ে গোলে ঢোকানো। এঁদের মধ্যে প্রথম জন ফ্রী কিক স্পেশালিষ্ট তকমা পেয়েছিলেন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে এসে। এক্ষত্রে উল্লেখ্য এই একই ক্লাবের হয়ে কীন্তু বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফ্রী কিক স্পেশালিষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। তিনি অন্য কেউ নন ডেভিড বেকহ্যাম। অন্যদিকে কেরিয়ারের প্রথম দিকে লা মাসিয়া অ্যাকাডেমী তো নয়ই, সিনিয়র বার্সেলোনা দলেও প্রথম দিকে ফ্রী কিক নেওয়ার সেরম সূযোগ পাননি লিও।ঘটনাচক্রে মেসির প্রথম অ্যকাডেমীর অন্যতম কোচ
অ্যালবার্ট বেনাইগেস জানান - " It was something we did not practice.At Barcelona, we used to occasionally do free-kick drills with a wall. We would give the odd bit of advice, but it was not a part of the game we worked on particularly hard."
মেসির ফ্রী কিক স্পেশালিষ্ট হিসেবে উত্তরনের শুরু ২০০৭ এর পর। তার আগে রোনাল্ডিনহো এবং জাভি মুলত ফ্রী কিক নিতেন। ২০০৭-০৮ এবং ২০০৮-০৯ মরশুম থেকে নিয়মিত ফ্রী কিক নেওয়া শুরু করেন লিও। ২০০৮-০৯ মরশুমে মেসি ১টি গোল করেন ফ্রী কিক থেকে।২০০৯-১০ মরশুমে মেসি ২টি গোল করেন, পরের মরশুমে আবার ১টি গোল করেন ফ্রী কিক থেকে। পরবর্তী মরশুম অর্থাৎ ২০১১-১২ মরশুমে ৩টি গোল করেন। অথচ ২০১২-১৩ মরশুমে মেসি করলেন ৬টি গোল।২০১৩-১৪, ২০১৪-১৫ মরশুমে ক্রমান্বয়ে তিনি করলেন  ৪টি এবং ২টি গোল।এরপর কীন্তু তিনি আর পেছন ফিরে তাকাননি।
২০১৫-১৬ মরশুমে মেসি করলেন ৯টি গোল। তারপর কীন্তু তিনি আর পেছন ফিরে তাকাননি। আর এই সাফল্য কীন্তু একদিনে আসেনি। হঠাৎই মেসির এই ফ্রী কিক সাফল্যের জন্য যেই নামটি সবার আগে আসবে সেটি হল আরেক আর্জেন্টাইন মহাতারকা ডিয়োগো মারাদোনা। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাস, মারাদোনা যখন আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের কোচ, তখন মার্সেলিতে আর্জেন্টিনা দলের এক অনুশীলনে লিও পান ফ্রী কিক নেওয়ার এক বিশেষ পাঠ।তৎকালীন দলে মারাদোনার সহযোগী ফাার্নান্দো সিনোগ্রিনি জানান, একদিন এক প্র্যাকটিস সেশানে যখন লিও তাঁর অবসাদ দুর করার জন্য বলে ক্রমাগত লাথি মারছিলেন। কীন্তু কীছুতেই বল তেকাঠির মধ্যে রাখতে পারছিলেন না, তার পরেই আসেন ডিয়োগো। পরবর্তী টা তাঁর কথায়, "I saw Diego coming, he took him by the shoulder and said: 'Little Leo, little Leo, come here, man. Let's try it again.' It was like a teacher with his pupil. He continued: 'Put the ball here and listen to me: don't take your foot away from the ball so fast because otherwise it won't know what you want.' He then stroked the ball with his left foot straight into the angle of the net, with Messi's face full of admiration."
এই ঘটনাক্রমের পর পরিসংখ্যানে চোখ রাখলেই বোঝা যাবে যে মেসি নিজের খেলার ধরনটিকে কতটা বদলে নিয়েছেন।
মরশুম                    গোল
২০০৮-০৯                  ১
২০০৯-১০                  ২
২০১০-১১                  ১
২০১১-১২                  ৩
২০১২-১৩                  ৬
২০১৩-১৪                  ৪
২০১৪-১৫                  ২
২০১৫-১৬                   ৯
২০১৬-১৭                   ৫
২০১৭-১৮                   ৭
২০১৮-১৯                   ৭
সেই আলোচনাটির পরেই কার্যত বদলে গিয়েছিল লিও মেসির জীবনটাই। শুধুমাত্র বিশ্বের একজন সেরা স্ট্রাইকার হিসেবে নন, একজন ডেডবল স্পেশালিষ্ট হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। এবং যাঁর খেবার মধ্যে শুধুমাত্র পাওয়ার নয়, একটি অসাধারন শিল্পকর্মের দেখা মেলে। যেখানে রবার্তো কর্লোস, ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোরা সঠিক দিশা এবং গতি দিয়ে বলকে গোলে পাঠাচ্ছেন সেখানে বলের ওপর অসাধারন শৈল্পিক ছোঁয়া দিয়েই বলকে তেকাঠিতে রাখছেন লিও। এপ্রসঙ্গে মেসিরই এক সহযোগীর মন্তব্য লক্ষনীয়, "অনুশীলনে বলকে গোলে রাখার জন্য প্রত্যেকে অন্তত তিন থেকে চারটি শট নিতে হয়, সেখানে লিও একটা শটেই কিস্তিমাত করে দেয়। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বল এমনভাবে গোলে ঢুকে যায় যে ক্যামেরাম্যানও অবাক হয়ে যায়।
এই মুহুর্তে যদি বলা হয় বিশ্বের সেরা ফ্রী কিক টেকারদের কথা, তবে অবশ্যই লিও মেসির কথা আসবেই।আর আমাদের বাঙালিদের কথা বললে আমরা আরও একটু ছাতিটা চওড়া কলতে পারব কারন, এই যুবভারতীতে মেসির কর্নার থেকেই কীন্তু আর্জেন্টিনা গোলটি করেছিল।

No comments:

Post a Comment