কলকাতার প্রথম সিরিয়াল কিলার - Benami Diary

Monday, May 20, 2019

কলকাতার প্রথম সিরিয়াল কিলার

স্টোনম্যানের কথা শোনেননি এরম যুবক বা প্রৌঢ় এই বাংলায় পাওয়া কঠিন। কলকাতার রাজপথে কোনো এক অজানা ব্যাক্তি মাঝরাতে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে খুন করতেন। সে তো আশির দশকের কথা। কলকাতা পুলিশের ভাষ্য মতে ভোর তিনটে থেকে পাঁচটের মধ্যে খুন গুলো হত। আর ভিকটিম ছিলেন কলকাতার ফুটপাতবাসী ভিখিরি, কুলি বা চোলাই বিক্রেতারা।তবে এইসব খুনের পেছনে কোনো চুরির কথা শোনা যায়নি।তবে অবাক বিষয়, ৯০এর দশকের শুরু পর্যন্ত যতদিন সেই স্টোনম্যানের আতঙ্ক ছিল, কলকাতায় রাত্রে চুরি ডাকাতির সংখ্যা প্রচুর কমে গেছিল। আর এই সিরিয়াল কিলিং গোটা কলকাতা শুধু নয় রাজ্যকেও কাঁপিয়ে দিয়েছিল।
এরপর ধরুন আমাদের বাংলার নোলান সৃজিৎ মুখার্জীর ক্লাসিক ছবি বাইশে শ্রাবন। আবার সেই বিভীষিকাময় রাতের আতঙ্ককে ফিরিয়ে এনেছিল সিনেমা হলের আধো অন্ধকার কেবিন বা গেরস্তের সাধের ড্রয়িংরুমে। বাবা মায়ের সাথে সিনেমাটা দেখার সময় স্টোনম্যানের স্মৃতিচারনও শুনেছি। (দেখুন স্টার জলসায় সেন্সরড ভার্ষনই দেখায়, আপনার মনে পাপ)
সেসব তো নয় হালের ঘটনা। হ্যাঁ হালেরই, কারন বাংলা সাহিত্য ধরে বেশ কীছুটা, হ্যাঁ আরও একটু, না না আরও চলতে হবে, বেশ এসে পৌছে গেলাম বাংলার প্রথম সিরিয়াল কিলারের কাহিনীতে।
প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা পুলিশের জাঁদরেল দারোগা ছিলেন। আজকের অন্তর্জালে তাঁর ব্যাক্তিজীবন ও কর্মজীবন সম্পর্কে খুব বেশী তথ্য উপলব্দ্ধ নেই। হয়তো লালবাজারের গোয়েন্দা দফতরের ধুলোভরা কোনো ফাইলের ভেতরে তা জমা আছে। কোনো উৎসাহী পাঠক যদি তাঁর বিষয়ে কোনো তথ্য দেন তো তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। গোয়েন্দা বললেই আমাদের চোখের সামনে শার্লক হোমস, প্রদোষ মিত্র, ব্যোমকেশ বক্সী বা হালের শবর দাশগুপ্ত বা প্রজ্ঞাপারমিতা মুখার্জীর নাম গড়গড়িয়ে বলতে পারে বাঙালি। অথচ এঁদের মধ্যে শবর ছাড়া কেউই কীন্তু পুলিশ নন। প্রাইভেট ডিটেকটিভ বা সত্যান্বেষী, এবং সঙ্গত কারনেই বেশকীছু বিশেষ শক্তিধর।তাই এঁদের কাজের ক্ষেত্রে আইনি বাঁধাধরা বা চলতি কথায় বললে অফিসিয়াল বার্ডন নেই। ফলে তাঁদের কর্মপদ্ধতি সাধারন পুলিশি কর্মপদ্ধতি থেকে আলাদা অনেকাংশে। আবার শবর পুলিশ বটে, তাই কীছু আইনের মধ্যে থেকে পুলিশোচিত ব্যাপার থাকলেও চরিত্রটি কাল্পনিক হওয়ায়, সঠিক পুলিশি গোয়েন্দাদের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে একটি জিজ্ঞাসা থেকেই যায় পাঠকের মনে। এগুলি প্রতিটিই সাহিত্যের অঙ্গ, এবং সাহিত্যগুনে পরিপূর্ন। এবিষয়ে টিপ্পনীর কোনো ধৃষ্টতা আমার নেই।
আর তাই শবর দাশগুপ্তের জ্যাঠামশায় বা দাদুকে খোঁজার শুরুটা এখান থেকেই। এবং খুঁজতে গিয়ে যা পেলাম তা এক কথায় অনবদ্য। সানডে সাসপেন্সের ইউটিউব চ্যানেল থেকে দুটি গল্প শুনলাম দারোগা প্রিয়নাথ শিরোনামে। এবং দুটিতেই মুল অপরাধী ত্রৈলোক্য। নাহ ভুল করবেন না পুরুষ মানুষ ভেবে। ইনি স্ত্রীলোক এবং দেহোপজীবি। অথচ বারে বারে খুন করে আইনের ফাঁক গলে কী সুন্দর গলে যান। এবং একটি গল্পে অসাধারনভাবে তাঁকে মনস্তাত্বিক জালে ফেলে কথক গ্রেপ্তার করেন তা যেন আরও নাটকীয়। এর বেশী আমি কীছু বলবনা, তাহলে স্পয়লার দেওয়া হয়ে যাবে। যাঁরা গল্পগুলো পড়েননি তাঁরা পড়ে দেখুন একবার এবং যাঁরা শুনেছেন তাঁদেরও একবার পড়ে দেখতে অনুরোধ করব।
এবার আসি আমার এই কাহিনীর নামকরন প্রসঙ্গে। না মিথ্যে কথা নয় এটিই কলকাতার প্রথম সিরিয়াল কিলিং। এই ত্রৈলোক্যতারিনী কলকাতায় পর পর বেশ কয়েকটি খুন করেন। পৃথিবীর প্রথম সিরিয়াল কিলিংএর কথা প্রথম শোনা যায় ১৮৮৮ সালে, কীন্তু ত্রৈলোক্যতারিনীর ঘটনা তারও ৭ বছর আগেকার। সেই ইর্থে এখনও পর্যন্ত আমাদের ভারত তো বটেই সম্ভবত এই ধরাধামের প্রথম সিরিয়াল কিলার গৌরবের মুকুটধারী ইনিই। সবচেয়ে বড় বিষয় অন্যান্য সিরিয়াল কিলারদের ক্ষেত্রে মনস্তাতত্বিক বিষয় একটি বড় ব্যপার। বেশিরভাগ সিরিয়াল কিলারই কোনো এক জটিল মনস্তত্বের গোলমালে পরপর খুনগুলি করে যায়। কীন্তু এই মহানারী শুধুমাত্র চুরির উদ্দেশ্যেই এই খুনগুলি করেন। যা আমাদের একটু অন্যরকম থ্রিল দেয় বৈকী।এই সমস্ত ঘটনাগুলির তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়, এবং সেই অনুযায়ীই ঘটনাক্রমকে তিনি লিপিবদ্ধ করে গেছেন। তবে আইনি জটিলতা এড়াতে বেশ কীছু জিনিস হয়ত তিনি পরিবর্তন করেছেন। ১৮৭৮-১৯১১ সাল পর্যন্ত তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনের বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে তিনি শুরু করেন দারোগার দফতর নামক প্রথম বাংলা ক্রাইম পত্রিকা। আজ আপনাদের জন্য ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত তার কয়েকটি অমুল্য কপি থাকল এই পোষ্টের সাথে। আর হ্যাঁ আরও একটি অসামান্য বই থাকল সাথে, কলকাতা পুলিশের একাধিক বিখ্যাত গোয়েন্দা কাহিনী সম্বলিত এক অমুল্য সম্ভার। যদিও বইটির তিন বছর হয়নি তবুও পিডিএফ দিলাম কারন শুভস্য শীঘ্রম।
প্রসঙ্গতঃ দুটি ক্ষেত্রেই বইটি আমি স্ক্যান করিনি।ইন্টারনেট থেকে পাওয়া ভার্ষনগুলিকে আপলোড করলাম মাত্র।তাই ক্রেডিটটি সংস্লিষ্ট সংস্থা বা সাইটের প্রাপ্য।


No comments:

Post a Comment