পরাজিতকে ইতিহাস মনে রাখেনি কোনও কালে। আর তাই তো ইতিহাস লেখাই হয়েছে বিজয়ীকে গৌরবান্বীত করতে। তবুও কখনও কখনও ইন্দ্রজিৎরা হেরে গিয়েও জিতে যান, মাইকেল মধুসূদনের সৌজন্যে। হ্যাঁ এখন দূর্গাপুজো চলছে। দূর্গাপুজো মানেই দেবতাদের জয় আর অসুরদের পরাজয়। হ্যাঁ অসুরদের হত্যা করে মা দূর্গা পৃথিবীতে এনেছিলেন শান্তি। এই হল মোটামুটি হিন্দু ধর্মের বয়ানে মা দূর্গার আখ্যান। আচ্ছা আমাদের আশে পাশে যে সব মানুষগুলি ঘুরে বেড়ায় তাদের মধ্যে ঠিক কাকে দেখে আপনাদের অসুরের কথা মনে পড়ে বলুন না। আমি বলি? সেই কালো এবং একটু চেহারাবান মানুষগুলিই অসুরের প্রতিরূপ। একটু যদি খুলেই বলি তবে? হ্যাঁ ঠিক শ্যাম মান্ডী-পুলিন মুরমু-ডাকতর সোরেনদের দেখেই অসুর মনে হয় তো?
এতে সত্যিই কোনো দোষ নেই, কারন বছরের পর বছর আমরা মহিষাসুরের যে চেহারা আমরা দেখে আসছি তা ওদের সাথেই মিল খায়। হয়ত কোথাও কোনোকালে বিধিসম্মত সতর্কীকরণ ছিল মা দূর্গা এবং তার আশেপাশের সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক এবং বাস্তবের সাথে তার কোনো মিল নেই।কীন্তু সে তো মোটেই নয়।
এতে সত্যিই কোনো দোষ নেই, কারন বছরের পর বছর আমরা মহিষাসুরের যে চেহারা আমরা দেখে আসছি তা ওদের সাথেই মিল খায়। হয়ত কোথাও কোনোকালে বিধিসম্মত সতর্কীকরণ ছিল মা দূর্গা এবং তার আশেপাশের সমস্ত চরিত্র কাল্পনিক এবং বাস্তবের সাথে তার কোনো মিল নেই।কীন্তু সে তো মোটেই নয়।
***********************
ভারতে বা পারতীয় ভূখন্ডে আর্যদের আগমনের বহুপূর্বে যারা বসবাস করত তারা অর্থাৎ অস্ট্রীক জাতি গোষ্ঠীর মানুষগুলোই হল আসল অসুর। হ্যাঁ এখনো অসুর পদবীধারী কীছু জনগোষ্ঠী রয়ে গেছে।তারা জঙ্গলের আশেপাশেই বসবাস করত এবং গোষ্ঠীবদ্ধ হয়েই থাকত। এখনো কোনো আদিবাসী গ্রামে গেলে তাদের মধ্যেকার গনতান্ত্রীক ব্যাবস্থা দেখার মত। তারা সেযুগেও এরম গনতান্ত্রীকভাবেই বসবাস করত। সেই আদিবাসীদের দূর্গরক্ষাকারী রাজা ঘেরাসুর ছিলেন।ঠিক আমরা যেরম মহান আত্মাকে মহাত্মা বলি সেরমই মহান ঘোরাসুর ও মহিষাসুর উপাধি পেয়েছিলেন (সত্যি বলতে কী মহিষাসুরের সাথে মহিষের কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমি কোনোভাবে বুঝিনি)। পরবর্তীতে আর্যরা সম্মুখ সমরে ঘোরাসুরের সাথে না পেরে দূর্গা দেবীকে নিয়ে ছলাকলার মাধ্যমে ঘোরাসুরকে বধ করেন এবং প্রাচীন যুদ্ধ নীতি মোতাবেক ঘোরাসুর নারীর সাথে যুদ্ধ করতে চাননি। এর পর গোটা আর্যাবর্তে আর্যশাসন শুরু হয়। সেই বিজয়ক্ষণে সাঁওতাল, মুন্ডা, কোল, কুর্মি, মাহালী, কোড়া প্রভৃতি খেরোয়াল গোষ্ঠীর আদিবাসীরা তাদের বশ্যতা স্বীকার না করে নিজেদের প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে নারীর ছদ্মবেশে দাঁশাই নাচ, কাঠি নাচের মাধ্যমে অন্তরের দুঃখ নিয়ে আনন্দের অভিনয় করতে করতে সিন্ধুপাড় ছেড়ে আসাম, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, বঙ্গদেশ ও দক্ষিণ ভারতের বনে জঙ্গলে আশ্রয় নেয়।
****************
আবারও বলছি ইতিহাস মানেই সেখানে ম্যানুপুলেশান থাকবেই। ঠিক যেমন পাকিস্তানের ইতিহাস বই পড়লে জানতে পারবেন ভারত কোনওদিনই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জেতেনি। ঠিক তেমনি হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে মা দূর্গা অসুরদের দমন করে এই পৃথিবীতে শান্তি এনেছিলেন।এবং অসুররা অত্যন্ত বদ প্রজাতির ছিল। আর অবাক করা ব্যপার কী আমরা কোনওদিন অসুরদের পেছনের কথা না জেনেই তাদের ঘৃনা করেছি। আবার আদিবাসীদের এইসব আখ্যানের কীন্তু কোনো লেখ্য রূপ নেই তাই এর ঐতিহাসিক সত্যতা বা গবেষণা কোনটিই হয়নি। তবে আজও সারা ভারতে ছড়িয়ে থাকা লাখো বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষ
মহান রাজা ও দেশ হারানোর ব্যথা নিয়ে সেই হুদুড় দুর্গা মহিষাসুরকে অন্যায় নিধনের দিন থেকে আদিবাসীরা তাদের পিতৃপুরুষের স্মরণে অতি করুণ সুরে ‘হায়রে হায়রে’ বলতে বলতে এই দাঁশাই নাচ ও কাঠি নাচ পালন করে চলেছে। তাই এই দূর্গোৎসব শুধুই আনন্দের নয়, দুঃখেরও একইসাথে. . . . . . . . . . . . . . .
মহান রাজা ও দেশ হারানোর ব্যথা নিয়ে সেই হুদুড় দুর্গা মহিষাসুরকে অন্যায় নিধনের দিন থেকে আদিবাসীরা তাদের পিতৃপুরুষের স্মরণে অতি করুণ সুরে ‘হায়রে হায়রে’ বলতে বলতে এই দাঁশাই নাচ ও কাঠি নাচ পালন করে চলেছে। তাই এই দূর্গোৎসব শুধুই আনন্দের নয়, দুঃখেরও একইসাথে. . . . . . . . . . . . . . .
পরিশেষে একটিই কথা বলি আজকের এই অস্থির সময়ে একটি বিশেষ অংশের স্বার্থান্বেষী মানুষ এইসব কীছু ইতিহাসের(? ) অস্পষ্ট অংশকে ব্যবহার করে নিজেদের মত করে ব্যাখ্যা করে আজকের এই শংকর সমাজকে আবারও আলাদা করতে সচেষ্ট।তাই দূর্গোৎসব বা হুদুড় দূর্গা ২টি উৎসবই শুধুমাত্র উৎসব হিসেবেই পালন হোক এই আশা করি ।
বিশেষ দ্রস্টব্যঃ এই লেখাটির মাধ্যমে কাউকে বা কোনও জাতিগোষ্ঠীকে আঘাত করার চেষ্টা করা হয়নি। শুধুমাত্র একটি জাতিগোষ্ঠীর অতি প্রাচীন উৎসবের উৎস খোঁজার চেস্টা করা হয়েছে।কথাবলি ডট কমে অজিত দাসের লেখাটিকে এখানে তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
Bhalo lekha..
ReplyDeleteyes,information gulo unique
ReplyDeleteyes,information gulo unique
ReplyDeleteBah bes bhalo
ReplyDelete